Breaking
28 Apr 2025, Mon

ফোটোনিক ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং: অত্যাধুনিক কম্পিউটিংয়ের ভবিষ্যত

মোহাম্মদ জাবির হোসাইন:

বর্তমানে আমরা এমন এক যুগের দিকে অগ্রসর হচ্ছি যেখানে প্রতি মূহুর্তেই ডেটার পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে, পাশাপাশি জটিল সমস্যা সমাধানের চাহিদাও বেড়েছে। এই চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে দুটি অগ্রণী প্রযুক্তি সামনে এসেছে: ফোটোনিক কম্পিউটিং এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং। এদের প্রতিটির রয়েছে অনন্য পদ্ধতি ও সুবিধা, তবে কোন প্রযুক্তিটি বেশি সম্ভাবনাময়? সেটা জানতে হলে আমাদের সর্বপ্রথম এই প্রযুক্তিগুলোর সম্পর্কে জানতে হবে।

১৯৮০’র দশকে এস এ মিলার নামক একজন বিজ্ঞানী একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্রে বলেন যে, “ভবিষ্যতে ডেটা প্রসেসিংয়ে আলো ব্যবহার করা হতে পারে” এবং এই ধারণাটিই ফোটোনিক কম্পিউটিংয়ের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে ধরা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন বিজ্ঞানী, যেমন আমনোন ইয়ারিভ, ডেভিড এ বি মিলার ও রেমন্ড ডি রিচমায়ার অপটিক্যাল ইন্টারকানেক্টস ও অপটিক্যাল কম্পোনেন্ট নিয়ে কাজের মাধ্যমে এই বিষয় নিয়ে বিস্তর কাজ করার পথ সুগম করেছেন। ২০০০ সালের দিকে ইনটেল, আইবিএম এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে গবেষণা শুরু করে।

১৯৮১ সালে পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান সর্বপ্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এর ধারণা দেন। পরে ১৯৯৪ সালে পিটার শোর একটি অ্যালগরিদম তৈরি করে এই প্রযুক্তিকে ব্যাপক আলোচনায় নিয়ে আসেন। এরপর আইবিএম, গুগল ও মাইক্রোসফট সহ অনেক প্রতিষ্ঠান এর বাস্তবায়নে গবেষণা শুরু করে।

একটি সাধারণ কম্পিউটার মূলত ইলেকট্রন প্রবাহের মাধ্যমে বিট (০ ও ১) আকারে ডেটা প্রসেস ও ট্রান্সফার করে থাকে। তবে ফোটোনিক কম্পিউটিং-এ ইলেকট্রনের পরিবর্তে ফোটন বা আলোর কণা ব্যবহার করে ডেটা প্রসেসিং ও ট্রান্সফার করা হয়। যেহেতু ফোটন আলোর গতিতে চলে, তাই ডেটা অনেক দ্রুত ট্রান্সফার হয়, এবং এই প্রক্রিয়ায় তাপ বা শক্তি অপচয় হয় না বললেই চলে। আর কোয়ান্টাম কম্পিউটিং কোয়ান্টাম মেকানিক্স-এর নীতির ওপর ভিত্তি করে কাজ করে, যেখানে কিউবিট নামের একটি একক একসাথে অনেকগুলো অবস্থা (০ ও ১) একসাথে ধারণ করতে পারে। এর ফলে, জটিল সমস্যাগুলো অনেক দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হয়।

ফোটোনিক কম্পিউটিং-এর সুবিধাগুলো হলো, ফোটন আলোর গতিতে চলে, যা ডেটা প্রসেসিংকে খুব দ্রুত করে তোলে। একাধিক তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ ডেটা একসাথে ট্রান্সফার করা সম্ভব এবং এতে কম শক্তি খরচ হয়, ফলে এটি শক্তি দক্ষ। এছাড়া, ফোটোনিক কম্পিউটিং ইলেকট্রনিক সিস্টেমের সাথে অতি সহজে সংযুক্ত হতে পারে। এটি মূলত টেলিকমিউনিকেশন, ডেটা সেন্টার, অপটিক্যাল নেটওয়ার্কিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে চমৎকার কর্মক্ষমতা

অন্যদিকে, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এর প্রধান সুবিধা হলো এক্সপোনেনশিয়াল প্রসেসিং পাওয়ার, যা বিশাল সংখ্যার হিসাব, ক্রিপ্টোগ্রাফি, ও সিমুলেশনের ক্ষেত্রে কার্যকর। কিউবিটের মাধ্যমে একসাথে অনেক অবস্থা ধারণ করা যায়, যার ফলে এটি একসাথে অনেক গণনা করতে সক্ষম। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং জটিল কাজ যেমন ড্রাগ ডিজাইন, ম্যাটেরিয়াল রিসার্চ, ক্রিপ্টোগ্রাফি, এআই ও মেশিন লার্নিং ইত্যাদি সম্পাদনে অসাধারণ সক্ষমতা প্রদর্শন করে।

উভয় প্রযুক্তিরই বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফোটোনিক কম্পিউটিং প্রযুক্তি বৃহৎ পরিসরে ফোটোনিক সার্কিট তৈরি করা কঠিন। বৃহত্তর ইলেকট্রনিক সিস্টেমের সাথে এর সমন্বয় করা আরও জটিলতা সৃষ্টি করে এবং নতুন আর্কিটেকচার ও প্রোগ্রামিং মডেলের প্রয়োজন রয়েছে। অপরদিকে, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় কাজ করতে হয়, যা প্রযুক্তির জন্য বড় একটি প্রতিবন্ধকতা। এছাড়া, এটির উচ্চ ত্রুটি হার রয়েছে এবং এর ত্রুটি সংশোধন উন্নত করার প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমানে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং অনেক অ্যাপ্লিকেশনে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।

ফোটোনিক ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং উভয় প্রযুক্তিই নিজ নিজ ক্ষেত্রের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই দুটি প্রযুক্তি বিভিন্ন দিক থেকে আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম, এবং ভবিষ্যতে কম্পিউটিং পদ্ধতিতে বিপ্লব ঘটাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *